এবার সূর্য স্পর্শ!

কল্প সাধন মাতাল হাওয়া, আপন পথে হারিয়ে যাওয়া। জীবন দেখার অবাক টানে, সরল রেখার অন্য মানে। তোমার আমার কাচের দেয়াল, সূর্যটাকে রাখিস খেয়াল…।’

শিরোনামহীনের জনপ্রিয় এই গানের মতোই সূর্যের প্রতি বিজ্ঞানীদের আগ্রহ অনকে দিন থেকেই। তাই চাঁদের পর এবার পৃথিবীর শক্তির জোগানদাতাকে ‘ছুঁয়ে দেখতে’ মহাকাশযান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ‘পার্কার সোলার প্রোব’ নামের এই যানটি আগামী আগস্টে পাড়ি দেবে সূর্যের উদ্দেশে।

নাসা জানিয়েছে, ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্সের ডেল্টা-৪ হেভি রকেটে করে পাড়ি দেবে পার্কার সোলার প্রোব। মার্কিন বিমানবাহিনীর সহায়তায় ফ্লোরিডা থেকে প্রথমবার

মহাকাশে যাচ্ছে এই রোবটিক যান। আকারে একটি গাড়ির সমান যানটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। সূর্যের প্রবল তাপ থেকে রক্ষা পেতে প্রায় সাড়ে চার ইঞ্চি কার্বন কম্পোজিট দিয়ে এটি সুরক্ষিত থাকবে।

ইতিহাসে এই অভিযান নজিরবিহীন। কারণ এর আগে সূর্যের এত পাশ দিয়ে কোনো মহাকাশযান যায়নি। মূলত উত্তপ্ত সূর্যের বহির্বলয় ছুঁয়ে উড়ে যাবে পার্কার সোলার প্রোব। সেই সঙ্গে নক্ষত্রটির ভেতর দিয়ে চলা জটিল প্রক্রিয়া ও বিকিরণসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।

নাসার স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের বিজ্ঞানী অ্যালেক্স ইয়ং বলেন, ‘কয়েক দশক ধরেই সূর্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। খালি চোখে যতটা স্থিতিশীল মনে হয়, নক্ষত্রটি আসলে তা নয়। প্রতিনিয়ত এর পরিবর্তন হচ্ছে। চলছে জটিল চুম্বকীয় প্রক্রিয়া। পার্কার সোলার প্রোব অভিযানে এবার আমরা অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর পেতে সক্ষম হব।’

সূর্যপৃষ্ঠের উষ্ণতা সাড়ে ৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। আর পারিপার্শ্বিক অঞ্চলের উষ্ণতা প্রায় ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাসা জানায়, প্রায় ৬০ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করবে পার্কার সোলার প্রোব। অত্যাধুনিক ‘হিট শিল্ড’ যানটিকে অক্ষত রাখবে। পৃথিবীতে তথ্য পাঠাবে এর আধুনিক কমিউনিকেশন প্যানেল। আর সবকিছু ঠিক হলে আগস্টেই নজিরবিহীন ইতিহাসের সাক্ষী হবে বিশ্ব; জানা যাবে সৌরবায়ুর রহস্য, পৃথিবীর প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে বহু অজানা তথ্য। সুতরাং এবার অপেক্ষার পালা।